১০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোটের আগে আ’লীগের বিচারে একমত এনসিপি-হেফাজত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:৪০:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • ৪৩ Time View

গণহত্যা, সন্ত্রাস ও মানবতাবিরোধী অপরাধে নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের বিচারে একমত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও হেফাজতে ইসলাম। বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন বাতিল করে দলটির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা, দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার দাবিতেও একমত হয়েছে এনসিপি-হেফাজত।

বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান। এনসিপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

গত ৫ এপ্রিল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছিল নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হেফাজত। তখন বিএনপির তরফে জানানো হয়েছিল, দ্রুত নির্বাচনের জন্য হেফাজত একমত হয়েছে।

যদিও পরবর্তীতে হেফাজতের তরফে জানানো হয়, কখনও নির্বাচনে যুক্ত হবে না সংগঠনটি। আওয়ামী লীগের বিচার, সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে।
বিএনপির কয়েকজন নেতা ইসলামপন্থিদের যেভাবে ঢালাও উগ্রবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন, এ নিয়ে অসন্তোষ জানানো হয়েছে।

আজকের বৈঠকের বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, হেফাজতের আগ্রহে বৈঠক হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি। হেফাজত চায় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচার হোক। এ দাবিতে ঐকমত্য সৃষ্টি করতেই বৈঠক।

এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী সমকালকে বলেন, সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যোগ করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এনসিপি বহুত্ববাদকে সমর্থন করেছে। কিন্তু বহুত্ববাদ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। হেফাজত চায় ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ মূলনীতি হিসেবে ফিরুক। এনসিপি জানিয়েছে তারা মতামত পুনর্বিবেচনা করবে।

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা জামায়াতে ইসলামীর সমালোচক। বিএনপি ও এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করলেও জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা হবে কি-না প্রশ্নে, মুহিউদ্দিন রাব্বানী সমকালকে বলেন, সবার সঙ্গেই পর্যায়ক্রমে কথা হবে। ১২ এপ্রিল সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের সময়ে ২০১৩ ও ২০২১ সালে হেফাজতের কর্মসূচিতে সহিংসতার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে একমত হয়েছে এনসিপি। নবগঠিত দলপির কেন্দ্রীয় সংগঠক রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের দ্রুত বিচার করা এবং হেফাজতের নানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারে সবাই একমত হয়েছেন।

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোটের মতো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতারা হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন।

এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে কি-না, প্রশ্নে মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, সংগঠনের মহাসচিব আগেই স্পষ্ট করেছেন ভোটের সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক নেই। তবে হেফাজতের অনেকে রাজনীতি করেন, তাই নির্বাচনের কিছু কথা এসে যায়। কিন্তু নির্বাচন কবে হবে- এ নিয়ে হেফাজতের কোনো দাবি-দাওয়া নেই।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের নায়েবে আমির ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আহমেদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

এনসিপির পক্ষে ছিলেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহদী প্রমুখ।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

মিরপুরে তিতাস গ্যাসের লোক দেখানো অভিযান

ভোটের আগে আ’লীগের বিচারে একমত এনসিপি-হেফাজত

Update Time : ০২:৪০:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

গণহত্যা, সন্ত্রাস ও মানবতাবিরোধী অপরাধে নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের বিচারে একমত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও হেফাজতে ইসলাম। বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন বাতিল করে দলটির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা, দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার দাবিতেও একমত হয়েছে এনসিপি-হেফাজত।

বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান। এনসিপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

গত ৫ এপ্রিল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছিল নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হেফাজত। তখন বিএনপির তরফে জানানো হয়েছিল, দ্রুত নির্বাচনের জন্য হেফাজত একমত হয়েছে।

যদিও পরবর্তীতে হেফাজতের তরফে জানানো হয়, কখনও নির্বাচনে যুক্ত হবে না সংগঠনটি। আওয়ামী লীগের বিচার, সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে।
বিএনপির কয়েকজন নেতা ইসলামপন্থিদের যেভাবে ঢালাও উগ্রবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন, এ নিয়ে অসন্তোষ জানানো হয়েছে।

আজকের বৈঠকের বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, হেফাজতের আগ্রহে বৈঠক হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি। হেফাজত চায় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচার হোক। এ দাবিতে ঐকমত্য সৃষ্টি করতেই বৈঠক।

এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী সমকালকে বলেন, সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যোগ করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এনসিপি বহুত্ববাদকে সমর্থন করেছে। কিন্তু বহুত্ববাদ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ। হেফাজত চায় ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ মূলনীতি হিসেবে ফিরুক। এনসিপি জানিয়েছে তারা মতামত পুনর্বিবেচনা করবে।

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা জামায়াতে ইসলামীর সমালোচক। বিএনপি ও এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করলেও জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা হবে কি-না প্রশ্নে, মুহিউদ্দিন রাব্বানী সমকালকে বলেন, সবার সঙ্গেই পর্যায়ক্রমে কথা হবে। ১২ এপ্রিল সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের সময়ে ২০১৩ ও ২০২১ সালে হেফাজতের কর্মসূচিতে সহিংসতার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে একমত হয়েছে এনসিপি। নবগঠিত দলপির কেন্দ্রীয় সংগঠক রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের দ্রুত বিচার করা এবং হেফাজতের নানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারে সবাই একমত হয়েছেন।

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোটের মতো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতারা হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন।

এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে কি-না, প্রশ্নে মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, সংগঠনের মহাসচিব আগেই স্পষ্ট করেছেন ভোটের সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক নেই। তবে হেফাজতের অনেকে রাজনীতি করেন, তাই নির্বাচনের কিছু কথা এসে যায়। কিন্তু নির্বাচন কবে হবে- এ নিয়ে হেফাজতের কোনো দাবি-দাওয়া নেই।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের নায়েবে আমির ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আহমেদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

এনসিপির পক্ষে ছিলেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহদী প্রমুখ।