০৪:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ প্রকাশের পর পত্রিকার অফিসে পুলিশ

পল্লবী এলাকায় হুন্ডি ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের নিয়ে একটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে পত্রিকাটির ওপর চাপ বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাধর একটি চক্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ যৌথভাবে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

গত ২১ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘শামীম সেনা’ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুন্ডি ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার বিস্তৃত বিবরণ উঠে আসে। তার এই কর্মকাণ্ডে পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম এবং এসআই মিজানের ‘আশীর্বাদ’ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। এই তথ্য প্রকাশের পর থেকেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধমূলক আচরণ দেখা দেয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে।

পুলিশি অভিযান ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ:
প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র দুইদিন পর আজ (বুধবার) দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে এসআই মিজানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য, অভিযুক্ত শামীম সেনা ও তার কয়েকজন সহযোগী মিলে খবরের আলো পত্রিকার বার্তা কার্যালয়ে প্রবেশ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, তারা কোনো ধরনের সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াই তল্লাশি চালায় এবং পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আমিরুজ্জামান আমিরকে ‘ম্যানেজ’ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে এসআই মিজান জানান, তিনি “ওসি নজরুলের নির্দেশে” এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তার এ বক্তব্য থেকেই স্থানীয় সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, পল্লবীর ওসির ভূমিকায় চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ওসি প্রদীপের ‘ছায়া’ দেখা যেতে পারে।

সিসিটিভি ফুটেজে পুলিশি দমননীতি স্পষ্ট:
পত্রিকা কার্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের দলটি শুধুমাত্র অফিস নয়, বরং ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাটে বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের ঘরেও অনুমতি ছাড়া ঢুকে পড়ে। মূল ফটক আটকে রাখা হয়, যেন কেউ ভেতরে ঢুকতে বা বাইরে যেতে না পারে। বাসিন্দাদের ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং এক সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। ভিডিওতে পুলিশ সদস্যদের গালিগালাজ ও হুমকির চিত্রও স্পষ্ট।

পত্রিকা কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া:
খবরের আলো-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের হুমকি, ভয়ভীতি ও হয়রানিমূলক তল্লাশি স্বাধীন গণমাধ্যম ও মুক্ত সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত। ইতোমধ্যে পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে, তবে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
প্রধান সম্পাদক আমিরুজ্জামান আমির বলেন, “আমরা মনে করি, এই হামলা শুধু আমাদের পত্রিকার ওপর নয়, এটি দেশের স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণতান্ত্রিক চেতনার ওপর এক নির্মম আঘাত। যারা সত্য তুলে ধরতে চায়, তাদের মুখ বন্ধ করতে এই চক্রান্ত চলছে। আমরা এর ন্যায়বিচার চাই।

মানবাধিকার সংগঠন ও সাংবাদিক ইউনিয়নের নিন্দা:
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরাম এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, “যেখানে সাংবাদিকেরা নিরাপদ না, সেখানে গণতন্ত্র টিকবে না। পল্লবীতে যে ধরনের পুলিশি দমননীতি চর্চা হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক এবং অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন এই অভিযোগকে কীভাবে নেয় এবং স্বাধীন গণমাধ্যমকে রক্ষা করতে আদৌ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয় কি না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

rafiqul islam

চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ

সংবাদ প্রকাশের পর পত্রিকার অফিসে পুলিশ

Update Time : ১১:২২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

পল্লবী এলাকায় হুন্ডি ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের নিয়ে একটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে পত্রিকাটির ওপর চাপ বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাধর একটি চক্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ যৌথভাবে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

গত ২১ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘শামীম সেনা’ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুন্ডি ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার বিস্তৃত বিবরণ উঠে আসে। তার এই কর্মকাণ্ডে পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম এবং এসআই মিজানের ‘আশীর্বাদ’ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। এই তথ্য প্রকাশের পর থেকেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধমূলক আচরণ দেখা দেয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে।

পুলিশি অভিযান ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ:
প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র দুইদিন পর আজ (বুধবার) দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে এসআই মিজানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য, অভিযুক্ত শামীম সেনা ও তার কয়েকজন সহযোগী মিলে খবরের আলো পত্রিকার বার্তা কার্যালয়ে প্রবেশ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, তারা কোনো ধরনের সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াই তল্লাশি চালায় এবং পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আমিরুজ্জামান আমিরকে ‘ম্যানেজ’ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে এসআই মিজান জানান, তিনি “ওসি নজরুলের নির্দেশে” এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তার এ বক্তব্য থেকেই স্থানীয় সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, পল্লবীর ওসির ভূমিকায় চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ওসি প্রদীপের ‘ছায়া’ দেখা যেতে পারে।

সিসিটিভি ফুটেজে পুলিশি দমননীতি স্পষ্ট:
পত্রিকা কার্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের দলটি শুধুমাত্র অফিস নয়, বরং ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাটে বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের ঘরেও অনুমতি ছাড়া ঢুকে পড়ে। মূল ফটক আটকে রাখা হয়, যেন কেউ ভেতরে ঢুকতে বা বাইরে যেতে না পারে। বাসিন্দাদের ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং এক সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। ভিডিওতে পুলিশ সদস্যদের গালিগালাজ ও হুমকির চিত্রও স্পষ্ট।

পত্রিকা কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া:
খবরের আলো-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের হুমকি, ভয়ভীতি ও হয়রানিমূলক তল্লাশি স্বাধীন গণমাধ্যম ও মুক্ত সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত। ইতোমধ্যে পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে, তবে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
প্রধান সম্পাদক আমিরুজ্জামান আমির বলেন, “আমরা মনে করি, এই হামলা শুধু আমাদের পত্রিকার ওপর নয়, এটি দেশের স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণতান্ত্রিক চেতনার ওপর এক নির্মম আঘাত। যারা সত্য তুলে ধরতে চায়, তাদের মুখ বন্ধ করতে এই চক্রান্ত চলছে। আমরা এর ন্যায়বিচার চাই।

মানবাধিকার সংগঠন ও সাংবাদিক ইউনিয়নের নিন্দা:
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরাম এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, “যেখানে সাংবাদিকেরা নিরাপদ না, সেখানে গণতন্ত্র টিকবে না। পল্লবীতে যে ধরনের পুলিশি দমননীতি চর্চা হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক এবং অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন এই অভিযোগকে কীভাবে নেয় এবং স্বাধীন গণমাধ্যমকে রক্ষা করতে আদৌ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয় কি না।