১১:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রিকশা ‘ফাঁদে’ পড়ে না, বরং রিকশার ‘ফাঁদে’ পড়ছে ঢাকা

বুধবার সকাল ১০টা। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের বড় অংশজুড়ে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। চারটি সড়কের সংযোগস্থল ওই গোলচত্বর ঘিরে তীব্র যানজট।

ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, গোলচত্বরটি দিয়ে একসময় রিকশা চলাচল করতে দেওয়া হতো না। পুলিশের এ সিদ্ধান্ত ছিল যানজট এড়াতে। তবে অনেক দিন ধরেই গোলচত্বর দিয়ে রিকশা চলাচলে বাধা দেওয়া হয় না।

গোলচত্বরে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে দেখা যায়, রিকশা ও মোটরসাইকেলচালকেরা ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল মানতে চান না। সুযোগ পেলেই চালানো শুরু করেন। তখন এসব যানবাহনের দেখাদেখি অন্যরাও সিগন্যাল অমান্য করা শুরু করে।

এ ছাড়া চারটি সড়কের মুখে যাত্রীর জন্য ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক অপেক্ষা করে। তাতে অন্য যানবাহনের চলাচলের পথ সরু হয়ে যায়। রাস্তার উল্টো পথ দিয়ে চলাচলের প্রবণতা তো রয়েছেই।

সব মিলিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ঘিরে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা।

শুধু মিরপুর নয়, ঢাকার অনেক প্রধান সড়কে এখন চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। ট্রাফিক পুলিশ ব্যাটারিচালিত রিকশা আটকাতে নানা চেষ্টা করছে। সড়কে বসানো হচ্ছে রিকশা ফাঁদ বা ট্র্যাপার। যদিও কাজের কাজ তেমন হচ্ছে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, যে যার মতো করে রিকশাগুলো রাস্তায় নামাচ্ছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখে। অনুমোদন দেওয়ার কাজটি পুলিশ করে না।

রিকশায় ব্যাটারি কবে থেকে
ঢাকায় রিকশা চলছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। একসময় সব সড়কেই রিকশা চলতে পারত। তবে ঢাকা শহরে যানজট যত বেড়েছে, ততই রিকশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়েছে।

ট্রাফিক পুলিশের পুরোনো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মূল সড়ক রিকশামুক্ত করা হয়েছিল। রিকশা চলত মূলত অলিগলি দিয়ে। যানজট কম থাকা কিছু বড় সড়কে রিকশা চলতে দেওয়া হতো।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালের পর থেকে চীন থেকে আমদানি করা ইজিবাইকের অনুকরণে রিকশায় মোটর ও ব্যাটারি যুক্ত করা শুরু হয়। তবে ঢাকার মূল সড়কে এসব যান প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। ফলে সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়েনি।

প্রধান সড়কে বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। গতকাল শনিবার ঢাকার বিজয়নগরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণী এলাকায়
প্রধান সড়কে বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। গতকাল শনিবার ঢাকার বিজয়নগরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণী এলাকায়ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১১ সালের দিকে তাঁরা প্রথম এ ধরনের (মোটর ও ব্যাটারিযুক্ত তিন চাকার যান) যান দেখতে পান। রিকশায় মোটর ও ব্যাটারি যুক্ত করা হয়েছে সম্পূর্ণ স্থানীয় মিস্ত্রিদের দ্বারা।

ব্যাটারিচালিত রিকশা বেশি আলোচনায় আসে ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে। ওই বছরের ১৫ মে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেন চালকেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাটারিচালিত রিকশার পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা হয়।

২০২৪ সালের ১৯ মে তৎকালীন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত) রিকশাচালকদের কথা বিবেচনা করে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন। এরপর থেকেই মূলত বাড়তে থাকে রিকশার সংখ্যা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশি কার্যক্রম ঢিলেঢালা হয়ে পড়ার সুযোগে রাজধানীর সব সড়কে চলাচল শুরু করে রিকশা। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের আদেশ দেন। এরপর কয়েক দিন ঢাকায় বিক্ষোভ করে নগর অনেকটা অচল করে রাখেন রিকশাচালকেরা।

পরে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে। ওই বছর ২৫ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ বা চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই বিষয়বস্তুর ওপর এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা দেন। ফলে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের সুযোগ তৈরি হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিগত দুই বছরে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির কারণ দুটি—স্বল্প বিনিয়োগে বেশি লাভ এবং চালকদের আগ্রহ।

রাজধানীতে নিবন্ধিত সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার দাম যেখানে ২০ লাখ টাকার বেশি, সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশার খরচ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, সিএনজিচালিত অটোরিকশার দাম ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। নিবন্ধিত হলেই সেটার দাম ২০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দৈনিক জমা হিসেবে পাওয়া যায় ১ হাজার টাকার মতো। বিপরীতে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের দৈনিক জমা পাওয়া যায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।

রাজধানীর রায়েরবাজারে মুন্সী গ্যারেজ নামে পরিচিত একটি রিকশার গ্যারেজে গত ১৩ মার্চ গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ২০০টি প্যাডেল রিকশা ফেলে রাখা হয়েছে।

গ্যারেজের ব্যবস্থাপক পরিচয় দেওয়া মো. রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাপা রিকশার (প্যাডেল) চাহিদা নাই। তাই পুরোনো রিকশা ভেঙে নতুন করে ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যবসা বাড়ানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এখন আর কেউ প্যাডেল রিকশা চালাতে চান না।

ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার কেন্দ্রের ব্যবসাও লাভজনক। একেক দফা রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা নেওয়া হয়।

ঢাকার রাস্তাগুলোতে বিভিন্ন ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা যায়। গতকাল শনিবার ঢাকার বিজয়নগরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরনী এলাকায়
ঢাকার রাস্তাগুলোতে বিভিন্ন ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা যায়। গতকাল শনিবার ঢাকার বিজয়নগরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরনী এলাকায়ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
ব্যাটারিচালিত রিকশার বিদ্যুৎ সরবরাহ আগে অবৈধ থাকলেও এখন সেটার বৈধতা নিশ্চিত করছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির আওতায় বর্তমানে বৈধ চার্জিং স্টেশনের সংখ্যা ২ হাজার ১৪৯।

ডেসকোর তথ্য অনুযায়ী, তাদের আওতায় বৈধ চার্জিং স্টেশন আছে ২ হাজার ২৬৩টি। প্রতিটি স্টেশনে প্রতিদিন ৩০ থেকে ২০০টি রিকশা চার্জ হয়।

ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশনস) কিউ এম শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৈধ স্টেশন না থাকলে কোম্পানি ক্ষতির মুখে পড়বে। তখন অবৈধভাবে বিদ্যুৎ চলে যাবে।

চালকেরা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে আগ্রহী হওয়ার কারণ তাঁদের কষ্ট কম হয়। আয় বেশি হয়।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার রিকশাচালক আমিন উল্লাহ বলেন, তিনি ২৭ বছর ‘প্যাডেল’ রিকশা চালিয়েছেন। দুই বছর ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছেন। রিকশার মালিককে ৪০০ টাকা জমা ও ব্যাটারি রিচার্জের ১২০ টাকা বাদে তাঁর ৭০০-৮০০ টাকা উপার্জন হয়।

আমিন বলেন, ‘প্যাডেল রিকশায় যাত্রী পাই না। ব্যাটারিচালিত রিকশা নেওয়ার পর এখন ভালো উপার্জন হয়।’

ঢাকার পল্টন এলাকায় প্রধান সড়কে বড় গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা
ঢাকার পল্টন এলাকায় প্রধান সড়কে বড় গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশাছবি: তানভীর আহাম্মেদ

যাত্রীরা যা বলছেন
ঢাকার রিকশার যাত্রীদের অনেকেই বলছেন, তাঁরা ব্যাটারিচালিত রিকশায় উঠতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কারণ, এর গতি বেশি, চালকের কষ্ট হয় না। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে চালক সহজেই চালিয়ে নিতে পারেন।

আবার কেউ কেউ বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের ওপর নির্ভরতা কমেছে। এখন একটু বেশি দূরত্বের পথেও চাইলে ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাওয়া যায়। ভাড়াও তুলনামূলক কম।

অবশ্য দুশ্চিন্তা তৈরি করছে দুর্ঘটনা। এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের ‘ব্রেকিং সিস্টেম’ স্থানীয় মিস্ত্রিদের তৈরি, যা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় না। চালকদের প্রশিক্ষণ নেই। ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা ব্যাপক।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী মো. রিজওয়ান হাসান বলেন, ‘এই রিকশাগুলো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়, তাদের কোনো লাইসেন্স নেই, পরিচয় নেই। তাই অপরাধ করলে চিহ্নিত করারও উপায় নেই।’ তিনি বলেন, আবার সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে বাহনটি যাত্রীর প্রয়োজনীয়তা মেটাচ্ছে। কিন্তু যে হারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে, স্বল্প সময়ে পুরো ব্যবস্থাপনা বড় সংকট তৈরি করবে বলে মনে হচ্ছে।

নগরবাসী ও অধিকারকর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা অথবা ইজিবাইকের চাহিদা রয়েছে। ফলে এগুলো একেবারে বন্ধ করা সম্ভব হবে না। দরকার হলো নিরাপদ ব্রেকিং সিস্টেমসহ ইজিবাইকের নকশা করা এবং সে অনুযায়ী তা তৈরি করা। সাশ্রয়ী খরচে তৈরি করে এসব ইজিবাইকের নিবন্ধন দিয়ে এবং চালকদের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ দিয়ে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোন সড়কে এসব যান চলতে পারবে, তা–ও নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।

কত ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে
ঢাকায় কত সংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক খালেকুজ্জামানের মতে, সংখ্যাটি ১২ লাখের মতো হতে পারে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা জানতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তাদের কাছে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গবেষণা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রায় তিন বছর আগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার প্যাডেল চালিত রিকশার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর বাইরে আর কোনো তথ্য নেই সিটি করপোরেশনের কাছে।

ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ অননুমোদিত তিন চাকার যান নিয়ন্ত্রণে ২০২১ সালে ‘থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা’র খসড়া তৈরি করেছিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তবে নীতিমালা অনুমোদন করা হয়নি।

খসড়া নীতিমালায় সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের প্রধান সড়কে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

মিরপুর ১০ নম্বরে প্রধান সড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশাছবি: আহমেদ উল্যা ইউসুফ
সমাধান কী
ঢাকায় স্বল্প দূরত্বে চলাচলের ক্ষেত্রে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের বাহন রিকশা। এর বিকল্প গড়ে ওঠেনি। একাংশ মোটরসাইকেলে চলাচল করেন, কিন্তু নারীদের মধ্যে দ্বিচক্র যানটির জনপ্রিয়তা কম।

মূল সড়কে চলাচলের জন্য বাস আছ। কিন্তু বাসগুলো বহু পুরোনো ও লক্কড়ঝক্কড়। বাসে গাদাগাদি করে চলাচল করতে অনেকেই আগ্রহী নন, বিশেষ করে নারীরা। বাস আরামদায়ক নয়, হয়রানির ঘটনা নিয়মিত ঘটে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাইলে আমাদের বাস জনপ্রিয় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাসসেবার উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা জরুরি।’

সামছুল হক বলেন, রিকশায় কীভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা ঢাকার গুলশান, বারিধারার মতো এলাকায় সামাজিক সংগঠন বা সোসাইটিগুলো দেখিয়েছে। সেখানে রিকশার সংখ্যা নির্দিষ্ট, চালকদের কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নিয়মনীতি মানতে বাধ্য করা হয়। ভাড়াও নির্দিষ্ট করা আছে। মূল কথা হলো, সমাধানের সদিচ্ছা দরকার।

দীর্ঘ মেয়াদে রিকশার মতো অবৈজ্ঞানিক যান সড়ক থেকে উঠিয়ে দিতে হবে উল্লেখ করে সামছুল হক বলেন, এর বিকল্প কী, সেটার উদাহরণ দেশে দেশে রয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

rafiqul islam

মিরপুরে তিতাস গ্যাসের লোক দেখানো অভিযান

রিকশা ‘ফাঁদে’ পড়ে না, বরং রিকশার ‘ফাঁদে’ পড়ছে ঢাকা

Update Time : ১২:২৭:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

বুধবার সকাল ১০টা। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের বড় অংশজুড়ে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। চারটি সড়কের সংযোগস্থল ওই গোলচত্বর ঘিরে তীব্র যানজট।

ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, গোলচত্বরটি দিয়ে একসময় রিকশা চলাচল করতে দেওয়া হতো না। পুলিশের এ সিদ্ধান্ত ছিল যানজট এড়াতে। তবে অনেক দিন ধরেই গোলচত্বর দিয়ে রিকশা চলাচলে বাধা দেওয়া হয় না।

গোলচত্বরে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে দেখা যায়, রিকশা ও মোটরসাইকেলচালকেরা ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল মানতে চান না। সুযোগ পেলেই চালানো শুরু করেন। তখন এসব যানবাহনের দেখাদেখি অন্যরাও সিগন্যাল অমান্য করা শুরু করে।

এ ছাড়া চারটি সড়কের মুখে যাত্রীর জন্য ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক অপেক্ষা করে। তাতে অন্য যানবাহনের চলাচলের পথ সরু হয়ে যায়। রাস্তার উল্টো পথ দিয়ে চলাচলের প্রবণতা তো রয়েছেই।

সব মিলিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ঘিরে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা।

শুধু মিরপুর নয়, ঢাকার অনেক প্রধান সড়কে এখন চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। ট্রাফিক পুলিশ ব্যাটারিচালিত রিকশা আটকাতে নানা চেষ্টা করছে। সড়কে বসানো হচ্ছে রিকশা ফাঁদ বা ট্র্যাপার। যদিও কাজের কাজ তেমন হচ্ছে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, যে যার মতো করে রিকশাগুলো রাস্তায় নামাচ্ছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখে। অনুমোদন দেওয়ার কাজটি পুলিশ করে না।

রিকশায় ব্যাটারি কবে থেকে
ঢাকায় রিকশা চলছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। একসময় সব সড়কেই রিকশা চলতে পারত। তবে ঢাকা শহরে যানজট যত বেড়েছে, ততই রিকশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়েছে।

ট্রাফিক পুলিশের পুরোনো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মূল সড়ক রিকশামুক্ত করা হয়েছিল। রিকশা চলত মূলত অলিগলি দিয়ে। যানজট কম থাকা কিছু বড় সড়কে রিকশা চলতে দেওয়া হতো।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালের পর থেকে চীন থেকে আমদানি করা ইজিবাইকের অনুকরণে রিকশায় মোটর ও ব্যাটারি যুক্ত করা শুরু হয়। তবে ঢাকার মূল সড়কে এসব যান প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। ফলে সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়েনি।

প্রধান সড়কে বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। গতকাল শনিবার ঢাকার বিজয়নগরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণী এলাকায়
প্রধান সড়কে বড় যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। গতকাল শনিবার ঢাকার বিজয়নগরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণী এলাকায়ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১১ সালের দিকে তাঁরা প্রথম এ ধরনের (মোটর ও ব্যাটারিযুক্ত তিন চাকার যান) যান দেখতে পান। রিকশায় মোটর ও ব্যাটারি যুক্ত করা হয়েছে সম্পূর্ণ স্থানীয় মিস্ত্রিদের দ্বারা।

ব্যাটারিচালিত রিকশা বেশি আলোচনায় আসে ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে। ওই বছরের ১৫ মে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেন চালকেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাটারিচালিত রিকশার পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা হয়।

২০২৪ সালের ১৯ মে তৎকালীন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত) রিকশাচালকদের কথা বিবেচনা করে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন। এরপর থেকেই মূলত বাড়তে থাকে রিকশার সংখ্যা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশি কার্যক্রম ঢিলেঢালা হয়ে পড়ার সুযোগে রাজধানীর সব সড়কে চলাচল শুরু করে রিকশা। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের আদেশ দেন। এরপর কয়েক দিন ঢাকায় বিক্ষোভ করে নগর অনেকটা অচল করে রাখেন রিকশাচালকেরা।

পরে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে। ওই বছর ২৫ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ বা চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই বিষয়বস্তুর ওপর এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা দেন। ফলে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের সুযোগ তৈরি হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিগত দুই বছরে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির কারণ দুটি—স্বল্প বিনিয়োগে বেশি লাভ এবং চালকদের আগ্রহ।

রাজধানীতে নিবন্ধিত সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার দাম যেখানে ২০ লাখ টাকার বেশি, সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশার খরচ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, সিএনজিচালিত অটোরিকশার দাম ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। নিবন্ধিত হলেই সেটার দাম ২০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দৈনিক জমা হিসেবে পাওয়া যায় ১ হাজার টাকার মতো। বিপরীতে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের দৈনিক জমা পাওয়া যায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।

রাজধানীর রায়েরবাজারে মুন্সী গ্যারেজ নামে পরিচিত একটি রিকশার গ্যারেজে গত ১৩ মার্চ গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ২০০টি প্যাডেল রিকশা ফেলে রাখা হয়েছে।

গ্যারেজের ব্যবস্থাপক পরিচয় দেওয়া মো. রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাপা রিকশার (প্যাডেল) চাহিদা নাই। তাই পুরোনো রিকশা ভেঙে নতুন করে ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যবসা বাড়ানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এখন আর কেউ প্যাডেল রিকশা চালাতে চান না।

ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার কেন্দ্রের ব্যবসাও লাভজনক। একেক দফা রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা নেওয়া হয়।

ঢাকার রাস্তাগুলোতে বিভিন্ন ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা যায়। গতকাল শনিবার ঢাকার বিজয়নগরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরনী এলাকায়
ঢাকার রাস্তাগুলোতে বিভিন্ন ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা যায়। গতকাল শনিবার ঢাকার বিজয়নগরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরনী এলাকায়ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
ব্যাটারিচালিত রিকশার বিদ্যুৎ সরবরাহ আগে অবৈধ থাকলেও এখন সেটার বৈধতা নিশ্চিত করছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির আওতায় বর্তমানে বৈধ চার্জিং স্টেশনের সংখ্যা ২ হাজার ১৪৯।

ডেসকোর তথ্য অনুযায়ী, তাদের আওতায় বৈধ চার্জিং স্টেশন আছে ২ হাজার ২৬৩টি। প্রতিটি স্টেশনে প্রতিদিন ৩০ থেকে ২০০টি রিকশা চার্জ হয়।

ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশনস) কিউ এম শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৈধ স্টেশন না থাকলে কোম্পানি ক্ষতির মুখে পড়বে। তখন অবৈধভাবে বিদ্যুৎ চলে যাবে।

চালকেরা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে আগ্রহী হওয়ার কারণ তাঁদের কষ্ট কম হয়। আয় বেশি হয়।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার রিকশাচালক আমিন উল্লাহ বলেন, তিনি ২৭ বছর ‘প্যাডেল’ রিকশা চালিয়েছেন। দুই বছর ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছেন। রিকশার মালিককে ৪০০ টাকা জমা ও ব্যাটারি রিচার্জের ১২০ টাকা বাদে তাঁর ৭০০-৮০০ টাকা উপার্জন হয়।

আমিন বলেন, ‘প্যাডেল রিকশায় যাত্রী পাই না। ব্যাটারিচালিত রিকশা নেওয়ার পর এখন ভালো উপার্জন হয়।’

ঢাকার পল্টন এলাকায় প্রধান সড়কে বড় গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা
ঢাকার পল্টন এলাকায় প্রধান সড়কে বড় গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশাছবি: তানভীর আহাম্মেদ

যাত্রীরা যা বলছেন
ঢাকার রিকশার যাত্রীদের অনেকেই বলছেন, তাঁরা ব্যাটারিচালিত রিকশায় উঠতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কারণ, এর গতি বেশি, চালকের কষ্ট হয় না। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে চালক সহজেই চালিয়ে নিতে পারেন।

আবার কেউ কেউ বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের ওপর নির্ভরতা কমেছে। এখন একটু বেশি দূরত্বের পথেও চাইলে ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাওয়া যায়। ভাড়াও তুলনামূলক কম।

অবশ্য দুশ্চিন্তা তৈরি করছে দুর্ঘটনা। এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের ‘ব্রেকিং সিস্টেম’ স্থানীয় মিস্ত্রিদের তৈরি, যা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় না। চালকদের প্রশিক্ষণ নেই। ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা ব্যাপক।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী মো. রিজওয়ান হাসান বলেন, ‘এই রিকশাগুলো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়, তাদের কোনো লাইসেন্স নেই, পরিচয় নেই। তাই অপরাধ করলে চিহ্নিত করারও উপায় নেই।’ তিনি বলেন, আবার সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে বাহনটি যাত্রীর প্রয়োজনীয়তা মেটাচ্ছে। কিন্তু যে হারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে, স্বল্প সময়ে পুরো ব্যবস্থাপনা বড় সংকট তৈরি করবে বলে মনে হচ্ছে।

নগরবাসী ও অধিকারকর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা অথবা ইজিবাইকের চাহিদা রয়েছে। ফলে এগুলো একেবারে বন্ধ করা সম্ভব হবে না। দরকার হলো নিরাপদ ব্রেকিং সিস্টেমসহ ইজিবাইকের নকশা করা এবং সে অনুযায়ী তা তৈরি করা। সাশ্রয়ী খরচে তৈরি করে এসব ইজিবাইকের নিবন্ধন দিয়ে এবং চালকদের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ দিয়ে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোন সড়কে এসব যান চলতে পারবে, তা–ও নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।

কত ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে
ঢাকায় কত সংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক খালেকুজ্জামানের মতে, সংখ্যাটি ১২ লাখের মতো হতে পারে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা জানতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে তাদের কাছে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গবেষণা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রায় তিন বছর আগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার প্যাডেল চালিত রিকশার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর বাইরে আর কোনো তথ্য নেই সিটি করপোরেশনের কাছে।

ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ অননুমোদিত তিন চাকার যান নিয়ন্ত্রণে ২০২১ সালে ‘থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা’র খসড়া তৈরি করেছিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তবে নীতিমালা অনুমোদন করা হয়নি।

খসড়া নীতিমালায় সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের প্রধান সড়কে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

মিরপুর ১০ নম্বরে প্রধান সড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশাছবি: আহমেদ উল্যা ইউসুফ
সমাধান কী
ঢাকায় স্বল্প দূরত্বে চলাচলের ক্ষেত্রে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের বাহন রিকশা। এর বিকল্প গড়ে ওঠেনি। একাংশ মোটরসাইকেলে চলাচল করেন, কিন্তু নারীদের মধ্যে দ্বিচক্র যানটির জনপ্রিয়তা কম।

মূল সড়কে চলাচলের জন্য বাস আছ। কিন্তু বাসগুলো বহু পুরোনো ও লক্কড়ঝক্কড়। বাসে গাদাগাদি করে চলাচল করতে অনেকেই আগ্রহী নন, বিশেষ করে নারীরা। বাস আরামদায়ক নয়, হয়রানির ঘটনা নিয়মিত ঘটে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাইলে আমাদের বাস জনপ্রিয় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাসসেবার উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা জরুরি।’

সামছুল হক বলেন, রিকশায় কীভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা ঢাকার গুলশান, বারিধারার মতো এলাকায় সামাজিক সংগঠন বা সোসাইটিগুলো দেখিয়েছে। সেখানে রিকশার সংখ্যা নির্দিষ্ট, চালকদের কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নিয়মনীতি মানতে বাধ্য করা হয়। ভাড়াও নির্দিষ্ট করা আছে। মূল কথা হলো, সমাধানের সদিচ্ছা দরকার।

দীর্ঘ মেয়াদে রিকশার মতো অবৈজ্ঞানিক যান সড়ক থেকে উঠিয়ে দিতে হবে উল্লেখ করে সামছুল হক বলেন, এর বিকল্প কী, সেটার উদাহরণ দেশে দেশে রয়েছে।